কমফোর্ট জোন নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারনা আছে 🙂
আজকের ব্লগ টি পড়লে,আপনি নতুন অনেক কিছু জানতে পারবেন, যা আপনার ক্যারিয়ারে অনেক কাজে দিবে। 😀
গত কয়েকদিন আগে, ফারুকের সাথে দেখা সে বেশ কিছু সমস্যায় আছে, তার সমস্যা গুলো শুনে তাকে বললাম কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে।এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এই কথা তা বলার পর সে ভুল বুঝে আমাকে বললো,
না এইরকম হয় নাকি,একটা কোম্পানির ভালো পদে চাকরী করছি চাকরী ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।কমফোর্ট জোন আমি ছাড়তে পারবো না।
আমি শুনে অবাক এবং কমফোর্ট জোন বলতে সে কি বুঝে এই প্রশ্নের উত্তরে যা বললো তা শুনে বুঝতে পারলাম, কমফোর্ট জোন মানে চাকরি বদল বা নতুন করে কিছু শুরু করা কে বুঝায়।
আচ্ছা, ফারুকের সাহেবের এমন কি সমস্যা ছিলো, যার ফলে আমি তাকে বললাম কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে?
তার সমস্যা হচ্ছে, উনি একটি কোম্পানিতে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন। এত বছর ধরে খুব সুনামের সাথে কোম্পানির কাজগুলো করছেন কিন্তু ইদানীং তার Monthly Goal Fill up হচ্ছে না, তার কাজগুলো যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেভাবে এগচ্ছে না।
সমস্যার কথা শুনার পর প্রশ্ন করলাম এই সমস্যার কারন কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
উত্তরে তিনি বললেন,আমার দৃঢ় বিশ্বাস,আমি এতদিন যেভাবে কাজ করে আসছি , ঠিক সেভাবেই কাজ করছি, এর থেকে ভালো পন্থা আর নেই।
এইদিকে উনার টিমের সদস্যদের ও একি অবস্থা, এত বছর ধরে, একি পন্থায়,কাজ করতে করতে তারা অলস, তাদের মধ্যে আগের মত উদ্যম নেই, কাজের স্পৃহা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
তার এই সমস্যার কারনে আমি তাকে কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলেছি, কারন যেকোন কাজ একই পন্থায় বছরের পর বছর ধরে করলে, সেই কাজ উদ্যোমের সাথে আগায় না সময়ের সাথে সাথে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে নিত্য নতুন কৌশল জানতে হবে এবং সেটা কাজের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
এই ছাড়া ও তাদের টিমের সদস্যের অলস হওয়ার কারন, তাদের নতুন নতুন কোন চ্যালেংঞ্জ দেওয়া হচ্ছে না।তাই তাদের মাইন্ডসেট সেট হয়ে গিয়েছে, মাস শেষে বেতন তো ঠিকই পাচ্ছি !
আপনি কি খেয়াল করছেন,ফারুক সাহেব বা আমরা ক্যারিয়ার জীবনের প্রথম ৫-১০বছর নতুন নতুন কাজ শিখছি,নতুন চিন্তা করার পিছে সময় দিচ্ছি,সে কারনেই প্রথম দিকে খুব দ্রুত সফলতার মুখ দেখতে পাই,আবার অন্যদিকে
ব্যাংক ব্যালেন্স বা বাড়ি গাড়ি ও যোগ হয় বা যখনই সফলতার দেখা পাই তখনই নিজের মগজকে ছুটি দিয়ে দেই।কিন্তু যদি কোন দূর্ঘটনায় সব কিছু শেষ হয়ে যায়, তখন কোন কিছু করার থাকে না,তাই যারা বিলিয়নার তারা,ব্যাংক ব্যালেন্স জিরো রেখে সব সময় সম্পদে বিনিয়োগ করে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে।
এই কারনে আমাদের উচিত ক্যারিয়ারে বা ব্যক্তিজীবনে জ্ঞানের পরিধি সব সময় বড় করতে হবে, নিজের মগজকে ছুটি দিলে হবে না, চিন্তা ভাবনা নিত্য নতুন কৌশল জেনে, এই জ্ঞানের পরিধিকে সবসময় আপডেট রাখতে হবে।
এই কারনে অনেকে একটি কোম্পানি তে অনেক বছর চাকরী করার পর তা ছেড়ে অন্য একটা কোম্পানিতে চাকরী নেয়, শুধুমাত্র নিত্য নতুন চ্যালেংজ ও কৌশল জেনে নিজের জ্ঞানের পরিধি কে সবসময় আপডেট রাখার জন্য।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে কমফোর্ট জোন মানেই চাকরী অদল বদল।
আপনি যে পজিশনে আছেন,সেই পজিশনের মানুষের সাথে কথা বলে তাদের থেকে পরামর্শ নিন সেই বিষয়ে প্রচুর পরিমানে পড়াশুনা করেন, নিজের সহকর্মীদেরকে নতুন জ্ঞান আহরণের জন্যে এবং সেগুলো কাজে লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে,
“Great things Never Come from Comfort Zone.”
আমাদের জ্ঞানের পরিধি সরলরেখা নয় বরং বৃত্তাকার, তাই এই বৃত্তাকার রেখায় ক্রমাগত জ্ঞান আহরন করে সুযোগ সুবিধা মতো কাজে লাগিয়ে এবং সেখান থেকে আবার শিক্ষা নেওয়ার চলমান প্রক্রিয়াই হলো কমফোর্ট জোনের বাইরে থাকার প্রকৃত অর্থ।
আশা করি বুঝাতে পেরেছি,আজকের লেখা ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।